নিজস্ব প্রতিবেদক :
ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর আশপাশের জেলা গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ জেলার অবৈধ ইটভাটার তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে উচ্চ আদালতের দেওয়া নির্দেশনা কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে, তা জানতে ঢাকাসহ আশপাশের পাঁচ জেলার ডিসি এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে ব্যক্তিগতভাবে জুম আইডির মাধ্যমে ভার্চুয়ালি আদালতে যুক্ত থাকতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আজ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরশেদ। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন আমাতুল করিম। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষে ছিলেন মো. শাহজাহান ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী সাইদ আহমেদ রাজা এবং ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালকের পক্ষে ছিলেন মো. মনিরুজ্জামান।
আইনজীবী মনজিল মোরশেদ জাগোনিউজকে বলেন, বায়ুদূষণ রোধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন বিষয়ে জানাতে ঢাকাসহ পাঁচ জেলার জেলা প্রশাসককে আদালতের শুনানিতে যুক্ত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি এই পাঁচ জেলায় অবস্থিত অবৈধ ইটভাটার তালিকা আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
ঢাকা শহর ও আশপাশের এলাকায় বায়ুদূষণ বন্ধে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে একটি সম্পূরক আবেদন করা হয়। আবেদনে ঢাকা শহরের বর্তমান দূষণের মাত্রা সর্বোচ্চ পর্যায়ের অবস্থান ও অবৈধ ইটভাটা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে চার দফা নির্দেশনা চাওয়া হয়। এ আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত আজ এ আদেশ দিয়েছেন।
আইনজীবী মনজিল মোরশেদ বলেন, বায়ুদূষণ বন্ধ করতে ঢাকা শহরে পরিবহন গাড়িতে, নির্মাণাধীন এলাকায় মাটি/বালি/বর্জ্য ঢেকে রাখা, সিটি করপোরেশন কর্তৃক রাস্তায় পানি ছিটানো, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি কাজে টেন্ডারের শর্ত পালন নিশ্চিত করা, কালো ধুয়া নিঃসরণকৃত গাড়ি জব্দ করা, অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করাসহ ৯ দফা নির্দেশ দিলেও তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, অবৈধ ইটভাটা প্রশাসনের সামনে পরিচালিত হচ্ছে কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এমনকি মোটা অংকের অর্থের বিনিময় সিজন আসলে মালিকরা অবৈধভাবে সাভার, ধামরাইয়ে ইটভাটা চালাচ্ছে।
এর আগে গত বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি বায়ুদূষণ রোধে ঢাকা শহরের প্রবেশমুখ গাবতলী, যাত্রাবাড়ী, পূর্বাচল, কেরানীগঞ্জ, টঙ্গীসহ বিভিন্ন পয়েন্টে পানি ছিটানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের আইনজীবী মুনিরুজ্জামান বলেন, ফায়ার সার্ভিসের নিয়মিত কাজের পাশাপাশি আদালতের আদেশ অনুসারে পানি ছিটানো। কিন্তু আমাদের কাছে পানি ছিটানোর মেশিন নেই। শুধু পাইপ দিয়ে পানি ছিটানো হয়।
ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ে গণমাধ্যমে ২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারি প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে এ রিট করা হয়। ওই রিটের শুনানি নিয়ে একই বছরের ২৮ জানুয়ারি আদালত রুলসহ আদেশ দেন।
পরে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন সংযুক্ত করে রাজধানীতে বায়ুদূষণ রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চেয়ে গত ৩০ জানুয়ারি হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) পিটিশন (সম্পূরক আবেদন) দায়ের করেন। সেটি শুনানি নিয়ে আজ এ আদেশ দেন।